Friday, December 13, 2019

লেডি কিলার



লেখকঃহিমেল মাহমুদ
.
স্যার, আমি খুনি। ”এই কথা বলতে বলতে সে কাঁপছিল।আমি যে থানার ইনচার্জ ছিলাম সেই থানায় সে আমার টেবিলে বসে ছিল।
সে আবার বলতে শুরু করল, হ্যা আমি খুন করেছি এবং  নিজেকে আত্মসমর্পণ করার জন্য এসেছি।
আমি তার দিকে এবার ভালো করে লক্ষ করলাম। প্রায় ১৯ বা ২০ বছর বয়সী একটি সুন্দরী মেয়ে। তার লম্বা চুল ছিল যা সত্যিই তাকে আরো সুন্দরী করে তুলেছিল, সে গোলাপী শার্ট এবং গারো নীল জিন্স পরা ছিল আর তার চোখে ছিলো সানগ্লাস। তাকে দেখে স্পষ্টতই বুঝা জাচ্ছে যে সে একজন শিক্ষিত এবং ধনী পরিবারের মেয়ে।

আমি দীর্ঘ সময় নিয়ে তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম, অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করলাম “আপনি কি  হত্যা করেছেন?” আমি অনেক্ক্ষণ তাকে দেখছিলাম  কারণ তার প্রথম কথাটিই ছিলো স্যার আমি খুনি যা আসলেই প্রত্যাশিত ছিল না।এছাড়াও আমি সৌন্দর্যে হারিয়ে গিয়েছি।
সে উত্তর দিলো "আমি ৩ জন মানুষকে হত্যা করেছি।"
শুনে আমি সত্যি অবাক হয়েছি।এতো সুন্দর একটি মেয়ে ৩জন মানুষকে হত্যা করতে পারে? এবং এটি আবার পুলিশের সামনেও নিজে থেকে এসে বলছে।
পুরো বিষয়টি আমার কাছে কিছুটা অস্বাভাবিক লাগছিলো। আমি এবার একটু সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি সত্যিই খুন করেছেন? আর কাদের খুন করেছেন?
“আমি আমার মালি, আমার ড্রাইভার এবং মাকে মেরে ফেলেছি। এটা বলে সে কিছুটা থমকে যায় এবং কাঁদতে লাগল।  “আমি আমার মাকে মেরেছি ”  এটা বলে সে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল।
আমি তার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই সে গ্লাস থেকে এক চুমুকে গ্লাস খালি করে ফেলে।
সে ব্যাগ থেকে একটা টিসু বের করে চুখ মুছে, কান্না ভরা গলায় আবার বলতে শুরু করে।  " আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি, দয়া করে আমাকে গ্রেপ্তার করুন অন্যথায় হয়তো আবারও আমি অন্য কাউকেও হত্যা করে ফেলব।
আমি শান্ত গলায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম “কেন আপনি তাদের হত্যা করলেন এবং  কেনইবা অন্যকে হত্যা করবেন? আর আপনার নাম কি?"

 “জান্নাত।” সে তখনও কাঁদছিল।
" আচ্ছা জান্নাত আপনি ওদের কেন মেরেছন ?"
"আমি জানি না। সবকিছুই অস্বাভাবিক ছিলো, আমি কাউকে মারতে চাইনি।খুন গুলি করার সময় মনে হচ্ছিলো কেউ আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। "
“জান্নাত , শুনুন আমি আপনাকে গ্রেফতার করতে পারব না।কারণ আমি কোনও অভিযোগ ছাড়াই এবং আপনি যে মৃত লোকদের কথা বলছেন তার মৃতদেহ না দেখে আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারব না।
সে আমার উপরে এবার  খুব উত্তেজিত হয়ে উঠলো ।
নিরুপায় হয়ে আমি বললাম, আচ্ছা "জান্নাত , লাশগুলি কোথায়?"
"আমি তাদের আমার বাগানে পুতে রেখেছি।" সে মিথ্যা বলছে বলে মনে হচ্ছে না তবে তিনি যা বলছিলেন তা আমার বিশ্বাসও হচ্ছে না।
আমি ঠিক করেছি তার বাসায় যাব।  আমি আমার সাথে দুজন কনস্টেবলকে নিয়ে তার সাথে বের হলাম।  আমরা যখন তার বাড়ীতে পৌঁছলাম তখন সে আমাদের তার বাগানে নিয়ে গেলেন এবং মালী এবং ড্রাইভারের লাশ সে যে জায়গায় পুতে রেখেছে সে জায়গাগুলি আমাদের দেখালো।
আমি কনস্টেবলদের মৃতদেহগুলি বের করার নির্দেশ দিয়ে আমি জান্নাতকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার মায়ের দেহ কোথায়?”
"বাড়ির ভিতরে।"
আমি জান্নাতের পিছু পিছু যেতে শুরু করি। সে আমাকে বাড়ির ভিতরে একটি অন্ধকার ঘরের সামনে নিয়ে এলো।
"ভিতরে।  আমার মা শুয়ে আছেন। ”সে আবার কাঁদতে শুরু করলো।
আমি আস্তে আস্তে ঘরের ভিতরে যেতে শুরু করলাম।  ঘরটি এত অন্ধকার ছিল যে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না।  আমার সাথে আমার একটি মিনি টর্চ ছিল।  আমি টর্চ হাতে নিয়ে পুরো ঘরটিতে লাসের খোজ করছিলাম কিন্তু ঘরটি খালি ছিল।  তারপরে আমি দেখলাম একটি বন্ধ দরজা দেখা যাচ্ছে।
আমি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে  গেলাম।ঘরের ভিতরে একটি নয়, তিনটি মৃতদেহ পড়ে আছে।  দু'জন পুরুষ এবং একজন বৃদ্ধা।  পুরুষ লাস দুটি জান্নাতের মালি এবং ড্রাইভারের হতে পারে,  আর বৃদ্ধা নিশ্চয়ই তার মা হতে পারে।  আমি ভাবছিলাম যে জান্নাত আমাকে কেন বলল যে বাগানে মালি আর ড্রাইভারের লাশ আছে। আর তাদের লাস বাগানে থাকলে এই দুটি কার লাস।

“আহহহহ ………” কেউ আমাকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করেছে।  আমি পিছনে তাকাতেই দেখি জান্নাত ডান হাতে আমার রক্তে ভরা ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে এভাবে দেখে আমি হতবাক হয়ে গেলাম।

 “আপনি এটা কেন করলেন?” আমি কাঁপতে কাঁদতে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম।
সে আমার কাছে এসে আমার পেটে ছুরিকাঘাত করল এবং বলল, "কারণ এটি খুন করতে আমার অনেক মজা লাগে,আমি তৃপ্তি পাই খুন করে” "
আমি মাটিতে পড়ে গেলাম এবং সে আমার পিস্তলটা  নিয়ে বাইরে চলে গেল।  আমি দুটো ফায়ার করার শব্দ  শুনতে পেলাম । সে আমার কনস্টেবলদেরকেও মেরে ফেলেছে।
সে আবার ফিরে এলো এবং রুমের লাইট জালালো
আমি তাকে শেষ বারের মত দেখছি,সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনি দিয়ে মাথা আচরাচ্ছে এবং গান গাইছে…………?

 __শেষ__

No comments:

Post a Comment

অদ্ভুত নিয়তি

লেখকঃ হিমেল মাহমুদ ১ -আসতে পারি? মোটা ফ্রমের চশমাটা চোখের দিকে আরেকটু এগিয়ে আসিফ দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। নিপা তার রুমে বসে হুমায়ন ...